'দরবারী পদাবলী'-তে গুরু-শিষ্য পরম্পরার অনবদ্য নজির কলকাতায়

‘দরবারী পদাবলী’-তে গুরু-শিষ্য পরম্পরার অনবদ্য নজির কলকাতায়

রাজ্যের খবর

‘দরবারী পদাবলী’-তে গুরু-শিষ্য পরম্পরার অনবদ্য নজির কলকাতায় – হারিয়ে যাওয়া বাংলার ‘দরবারী পদাবলী’ কীর্তন পরিবেশনের মাধ্যমে কলকাতার বিড়লা আকাদেমিতে অনুষ্ঠিত হল গুরু-শিষ্য পরম্পরার এক অনবদ্য নজির। বাংলার পদাবলী কীর্তনের এমন অপরূপ পরিবেশনের সঙ্গে আজকের প্রজন্ম পরিচিত নয়। মঞ্চে পদাবলী গাইলেন শিল্পী দেবলীনা ঘোষ ও তাঁর গুরু পণ্ডিত শ্যাম সুন্দর গোস্বামী, সঞ্চালনায় ছিলেন মধুমিতা বসু।

'দরবারী পদাবলী'-তে গুরু-শিষ্য পরম্পরার অনবদ্য নজির কলকাতায়
‘দরবারী পদাবলী’-তে গুরু-শিষ্য পরম্পরার অনবদ্য নজির কলকাতায়

দেবলীনা শোনালেন রূপানুরাগ পর্যায়ের কয়েকটি বাছাই করা প্রাচীন পদ। চারটি তালের সমাহারে চতুরঙ্গে শোনালেন জয়দেবের গীত গোবিন্দ থেকে ‘নায়ক নারায়ণ’ পদটি। সোম তালে গৌরচন্দ্রিকা ও তেওট তালে গোবিন্দদাসের পদ ‘নীলরতন কিয়ে নব ঘনঘটা’। এছাড়াও কীর্তনের বিভিন্ন প্রাচীন তাল, যেমন কাটা দশকোশী, বীরবিক্রম, কোটিসমুদ্র, দাসপ্যারী ইত্যাদিরও ব্যবহার দেখিয়েছেন তিনি তাঁর গানে। রেওয়াজি কণ্ঠে আর নাটকীয় প্রকাশে তাঁর গানগুলি দর্শকদের মধ্যে নিবিষ্ট মুগ্ধতা তৈরী করেছিল।

‘দরবারী পদাবলী’-তে গুরু-শিষ্য পরম্পরার অনবদ্য নজির কলকাতায়

প্রথমার্ধে শিষ্যের পরিবেশনের পর, গুরুকে মঞ্চে বরণ করে নেন দেবলীনা। তারপর পন্ডিত শ্যাম সুন্দর গোস্বামী তাঁর অপূর্ব দক্ষতায় শোনালেন মানভঞ্জনের পদ। পন্ডিতজীর কণ্ঠে খেয়াল, ঠুমরী, ধ্রুপদ, ভজনের পরিবেশন শুনে অভ্যস্ত শ্রোতারা, এদিন তাঁকে এক নতুন রূপে আবিষ্কার করলেন। জয়দেবের বিখ্যাত সেই পংক্তি ‘দেহি পদপল্লব মুদারম’ তাঁর নিবেদনে যেন প্রেক্ষাগৃহে বৃন্দাবন রচনা করল। তাঁর গানে গানে বাঙালী দর্শক বেশ কিছু দশক পর ফিরে পেল বৃন্দাবন বণিক, বংশীধারী চক্রবর্তী কিংবা হরিদাস করের মতো গত প্রজন্মের দক্ষ কীর্তন-শিল্পীদের হারিয়ে যাওয়া সুর-তাল আর গায়কীর মাদকতা।

'দরবারী পদাবলী'-তে গুরু-শিষ্য পরম্পরার অনবদ্য নজির কলকাতায়
‘দরবারী পদাবলী’-তে গুরু-শিষ্য পরম্পরার অনবদ্য নজির কলকাতায়

 

শ্রীখোলে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখালেন আচার্য ভরত দাস ও তরুণ বাদক সুশান্ত মান্না। বাঁশিতে সমস্ত অনুষ্ঠানটিকে বেঁধে রেখেছিলেন সৌম্যজ্যোতি ঘোষ। অনুষ্ঠানের শেষ অবধি পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে দর্শক বসে রইলেন অসীম মুগ্ধতা নিয়ে। শেষের মিলন অংশে দর্শক আসন থেকেই সকলে হাতে তালি দিয়ে গলা মেলালেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলার কীর্তনকে বাঙালির শাস্ত্রীয় সংগীত হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। দরবারী পদাবলীর লক্ষ্য সেই ‘সত্য’টিকেই নতুন প্রজন্মের শ্রোতাদের কাছে প্রতিষ্ঠিত করা, যা এইদিন সার্থক হয়েছে। দর্শকাসনে উপস্থিত ছিলেন ডঃ কঙ্কনা মিত্র, ধীমান দাস, অঙ্কুর মহারাজ, শিল্পী চন্দ্র ভট্টাচার্য, শিল্পী আদিত্য বসাক, শিল্পী অতীন বসাক, অমিত রঞ্জন বিশ্বাসের মতো ব্যক্তিত্ব।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *