অশােকস্তম্ভ – এর ইতিহাস

অশােকস্তম্ভ – এর ইতিহাস

ভ্রমণ

অশােকস্তম্ভ – এর ইতিহাস – মৌর্যবংশের সম্রাট অশোক ‘অশােকস্তম্ভ’ নির্মান করেন। তিনি মৌর্যবংশের তৃতীয় শাসক ছিলেন। তিনি খুবই শক্তিশালি রাজা ছিলেন। তিনি কলিঙ্গ যুদ্ধের পর বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। এর পর তিনি সারা জীবন বৌদ্ধধর্ম প্রচার – প্রসারে অতিবাহিত করেন। বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করার পর সম্রাট অশোক ভারত ছাড়াও অন্যান্য দেশে বৌদ্ধধর্ম প্রচার – প্রসার করেন। এছাড়াও তার ছেলে মহেন্দ্র ও শকমিত্রাকে শ্রীলঙ্কা পাঠায় বৌদ্ধধর্ম প্রচার করার জন্য। সম্রাট অশোক তিন বছরে ৮৪ হাজার স্তুপের নির্মান করে। ভারতের বহু জায়গায় স্তুপের নির্মান করে।

উত্তর প্রদেশ-এর বারাণসীতে সারনাথ জেলাতে অশােকস্তম্ভ তৈরি করে। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতবর্ষ প্রজাতন্ত্র হিসাবে ঘােষিত হওয়ার সময় সরকারিভাবে এই সারনাথের সিংহ-চিহ্নিত অশােকস্তম্ভ থেকে নেওয়া হয়েছে। ভারতের জাতীয় প্রতীক সারনাথের সিংহ-চিহ্নিত অশােকস্তম্ভের চারটি সিংহ পিঠে-পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আসল অশােকস্তম্ভটি সারনাথ জাতীয় মিউজিয়ামে রাখা হয়েছে।

অশােকস্তম্ভ – এর ইতিহাস
অশােকস্তম্ভ – এর ইতিহাস

নিচের আধারটিতে হাতি, ছুটন্ত ঘােড়া, ষাঁড় ও সিংহের রিলিফ রয়েছে। তবে এই চারটি প্রাণীর রিলিফকে পৃথক করতে তাদের মাঝে পদ্মের উপর চক্র রয়েছে। একটা গােটা বেলেপাথরকে খােদাই করে তৈরি ওই অশােকস্তম্ভের শীর্ষে রয়েছে ধর্মচক্র।

সরকার যে প্রতীকটি গ্রহণ করেছে, তাতে চারের বদলে তিনটি সিংহ দৃশ্যমান। চতুর্থ সিংহটি দেখা যায় না। নিচে কেন্দ্রস্থলে ধর্মচক্র ও তার দুপাশে যাড় ও ঘােড়ার রিলিফ, এছাড়া দুধারে অন্য চক্রগুলির আভাসমাত্র দেখা যায়। ঘন্টাকৃতির পদ্ম এখানে বাদ পড়েছে। একেবারে নিচে মাণ্ডুক্য উপনিষদ থেকে ‘সত্যমেব জয়তে’ কথাটি দেবনাগরী লিপিতে উৎকীর্ণ। সম্রাট অশোকের বিশেষ শিল্পকলার লক্ষণ করা যায় এই অশােকচক্র ও অন্যান্য মুর্তিকলাতেও।

জাতীয় পতাকা

ত্রিবর্ণ জাতীয় পতাকায় গেরুয়া, সাদা ও সবুজ রঙ সমান্তরালভাবে ক্রমানুসারে উপর থেকে নিচে সমান আয়তনে ব্যবহৃত। পতাকার আকারের ক্ষেত্রে এর চওড়া লম্বার তিন ভাগের দুভাগ হতে হবে। পতাকার কেন্দ্রে সাদার মধ্যে ঘন নীল রঙের অশােকচক্র রয়েছে। নিয়মানুযায়ী চক্রের ব্যাস সাদা রঙের অংশের সমান হতে হবে এবং ওই চক্রে ২৪টি স্পােক থাকবে। পতাকার গেরুয়া ত্যাগ ও সাহসের, সাদা সত্য ও শান্তির এবং সবুজ বিশ্বাস ও প্রাচুর্যের প্রতীক। অশােকস্তম্ভ – এর ইতিহাস

জাতীয় পতাকার চূড়ান্ত নকশাটি ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই গণ-পরিষদ (Constituent Assembly)-এর সভায় অনুমােদিত হয়।

অশােকস্তম্ভ – এর ইতিহাস
অশােকস্তম্ভ – এর ইতিহাস

সুক্ষ্ম শিল্পনৈপণ ও উন্নত রুচির সাখ্য বহন করে। পশুমুর্তীগুলি ভাস্কর্য শিল্পের অপুর্ব নিদর্ন। সারনাথের স্তম্ভের শীর্ষদেশে সংস্থাপিত ‘চারটি সিংহের মুর্তি’ অত্যাশ্চর্য জীবন্ত রূপ। সৌন্দর্য শক্তির প্রকাশ আজও দর্শকে মনে বিস্ময়  উৎপাদন সৃষ্টি করে। মৌর্যোযুগে পালিশের কাজে শিল্পিরা বিশেষ নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন। সম্রাট অশোক যেসব গুহা তৈরি করেছিলেন সে সকল গুহার ভিতরকার পাথার এতই মর্সৃণ যে কাঁচের মত দেখায়, যেন কাঁচের দর্পন।

বৈশিষ্ট্য ও নতুন শৈলির উদ্ভবঃ ঐতিহাসিকগণ মৌর্যস্থাপত্য ও ভাস্কর্যকে দুটি পর্যায়ে বিভক্ত করেছেন। একটি পর্যায়ে স্থান পেয়েছে সেই যুগে নির্মিত অসংখ্য বৌদ্ধ স্তুপগুলি ও আদি মৌর্যযুগের কয়েকটি স্থাপত্য ও ভাস্কর্য। এর মধ্যে ভরহুত, সাঁচি ইত্যাদি স্তুপগুলি প্রধান। এই স্তুপগুলিতে বিভিন্ন সাম্প্রতিক ঘটনা ও বুদ্ধের জীবনের নানা অলৌকিক ঘটনা ও জাতকের গল্পের নানা ঘটনাবলীর স্থাপত্য কীর্তির নিদর্শন আছে। এই স্তুপগুলি ছিল বিরাট গম্বুজাকৃতির এবং এর চারদিকে পাথরের রেলিং থাকত। সাধারণত স্তুপগুলির চারদিকে চারটি তােরণ থাকত এবং তােরণগুলিতে পাথরের খােদাই করা নানারকম কারুকার্য ছিল। ঐতিহাসিকরা মনে করেন এই স্থূপগুলির আয়তন পরবর্তীকালে আরাে বর্ধিত করা হয়েছিল। এই স্থাপত্য কীর্তিগুলির মান ছিল প্রাচীন, এগুলির মধ্যে বিভিন্ন উন্নত কারিগরি বিদ্যার প্রয়ােগ ছিল, সন্দেহ নেই কিন্তু ঐগুলির মধ্যে শিল্পীর নিপুণতার ছোঁয়া ছিল না।

অশােকস্তম্ভ – এর ইতিহাস

অপর একটি পর্যায়ে রয়েছে সম্রাট অশােকের আমলে তৈরি বিভিন্ন স্থাপত্য এবং তারমধ্যে অন্যতম প্রধান নিদর্শন হল অশােক স্তম্ভগুলি। একটিমাত্র খাড়া বেলে পাথরের উপরে অপর একটি পাথরে খােদাই করা সিংহমূর্তি। এই পর্যায়ের স্থাপত্য কীর্তিগুলিতে শিল্পীদের নিপুণ কারিগরিবিদ্যা, অসম্ভব দক্ষতা ও নক্সা এবং কারুকার্যের নিখুঁত বৈচিত্র্যের পরিচয় পাওয়া যায়। পাথরগুলিকে যে অসাধারণ দক্ষতায় নিপুণভাবে মসৃণ করা হয়েছিল তা অনুধাবন করে আশ্চর্য হতে হয়। ভারতীয় অন্যান্য স্থাপত্য কীর্তিগুলির মত এই শিল্পরীতিও অভিব্যক্তি, প্রযুক্তি ও নক্সা সম্পূর্ণভাবেই ভারতীয়। সারনাথের অশােকস্তম্ভে একটি স্তম্ভের উপর একটি পাথরের উপর খােদাই করা চারদিকে চারটি পশুমুর্তি ও তার নিচে অন্যান্য পশুমূর্তির রিলিফ চিত্র’ তখনকার যুগের পক্ষে সত্যিই বিস্ময়কর এবং এটিই সম্ভবত মৌর্য স্থাপত্যের সর্বোন্নত স্থাপত্য নিদর্শন। তবে বলা যায় ভারতীয় অন্যান্য স্থাপত্যকীর্তিগুলির মত এই শিল্পরীতিও মৌর্যযুগের অলঙ্কারাদিতেও অপূর্ব শিল্প-সুষমার পরিচয় পাওয়া যায়, যা অনন্য – অভিন্ন।

মৌর্যোত্তর যুগে গান্ধার শিল্পঃ মৌর্যযুগে যে উন্নত ধরনের শিল্পকলার ঐতিহ্য গড়ে ওঠে, মৌর্যোত্তর যুগে তা অব্যাহত থাকে। উত্তর ভারতের সাঁচি, বােধগয়া এবং দক্ষিণ ভারতের ভারুচ, অমরাবতী প্রভৃতি স্থানে এর নিদর্শন পাওয়া যায়। কুষাণ যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হল, “গান্ধার শিল্প’- র বিকাশ। আনুমানিক খ্রিঃপূঃ প্রথম শতকের মাঝামাঝি থেকে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দি পর্যন্ত এই শিল্প রিতি স্থায়ী হয়েছিল। গান্ধার শিল্প ভারতের বিস্ময়কর স্থাপত্য। এই শিল্পধারা বা গাধার শিল্প ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে গাধার ও তৎসংলগ্ন স্থানে ও তক্ষশিলায় খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের মধ্যকাল থেকে প্রসারলাভ করতে থাকে এবং গান্ধর শিল্পে ও ভাস্কর্যে যে সব মূর্তি তৈরি করা হত, সেগুলির বিষয়বস্তু ছিল বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন দিক।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *